ঘূর্ণিঝড় মোখা ইতোমধ্যে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারের উত্তরের দিকে ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে অতিক্রম করতে শুরু করেছে। বিষয়টি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তারিফুল নেওয়াজ কবির মুঠোফোনে ইউএনবিকে জানান, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ সকালে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১৫ কিলোমিটার বেগে কক্সবাজার অতিক্রম করতে শুরু করে (সময় উল্লেখ করা হয়নি)।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি আজ বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে পুরোপুরি বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
বুলেটিনে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'মোখা' উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হচ্ছে। রবিবার সকাল ৬টার দিকে ‘মোখা’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে বিটিআরসির জরুরি টিম গঠন
চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে এরই মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এর আগে সকালে অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা ইউএনবিকে বলেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত এর বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করতে পারি।’
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।